1. admin@kagojerbarta.com : admin :
ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিপস্টিকে মৃত্যুঝুঁকি!

প্রতিনিধির নাম
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সৌন্দর্য চর্চার সংজ্ঞা বদলেছে সময়ের সঙ্গে। একসময় নারীদের সাজসজ্জা সীমাবদ্ধ ছিল স্নো, পাউডার আর একটুখানি কাজলে। কিন্তু আজকের দিনে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের কনসিলার, লিপস্টিক, লিপ গ্লস, হাইলাইটার ও ব্লাশের মতো চকচকে প্রসাধনী সামগ্রী। অথচ এই চকচকে সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক স্বাস্থ্যঝুঁকি-যা ধীরে ধীরে নারীদের ঠেলে দিচ্ছে প্রাণঘাতী রোগের দিকে।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লিপস্টিক ও লিপ গ্লোসে পাওয়া গেছে সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, অ্যালুমিনিয়ামসহ ৯টি ক্ষতিকর ধাতু, যা শুধু ত্বকে প্রতিক্রিয়া নয়, দীর্ঘমেয়াদে স্নায়বিক রোগ, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।

গবেষকরা ৩২টি সাধারণ বাজারজাত লিপস্টিক ও লিপ গ্লোস পরীক্ষা করে দেখেছেন, তার ৭৫ শতাংশে পাওয়া গেছে সীসা, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা ও স্নায়বিক রোগের কারণ হতে পারে। একইসঙ্গে ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিও বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া গেছে, যা পাকস্থলীর টিউমার, কিডনির ক্ষতি এবং হাড় দুর্বলতা ঘটাতে পারে।

সবচেয়ে বেশি মাত্রায় মিলেছে টাইটানিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম। যা শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে অ্যালার্জি বা চর্মরোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণার ভয়ংকর দিক হলো, এই পণ্যগুলো কোনো বিলাসবহুল বা সীমিত সংস্করণের নয়। বরং বাজারে সহজলভ্য, বহুল ব্যবহৃত সাধারণ প্রসাধনী, যেগুলো দেশের দোকানপাট থেকে শুরু করে অনলাইন স্টোরেও পাওয়া যায়। গবেষকরা বলছেন, ক্ষতিকর পদার্থ শুধু আছে বললেই যথেষ্ট নয়, এগুলোর মাত্রা এতটাই বিপজ্জনক যে প্রতিদিনের ব্যবহারে শরীরেই জমে উঠছে ধীরে ধীরে মৃত্যুর বিষ।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আজও প্রসাধনীতে ধাতুর উপস্থিতির ওপর কোনো কঠোর আইন নেই। ফলে একের পর এক বিপজ্জনক উপাদান মিশে যাচ্ছে রঙিন লিপস্টিক বা চকচকে গ্লসের মধ্যে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছুটা এগিয়েছে। তারা সীসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে প্রসাধনী পণ্যে।

গবেষক দলের প্রধান বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব ধাতু নিয়মিত ব্যবহারে কীভাবে মানবদেহে জমে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে, সেটা এখনো যথেষ্টভাবে মূল্যায়িত হয়নি। আমরা বড় পরিসরে গবেষণা দাবি করছি এবং একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

একদিকে সুন্দর ঠোঁটের লোভ, অন্যদিকে অজান্তেই শরীরে প্রবেশ করা বিষাক্ত ধাতু। লিপস্টিক ব্যবহারে অনুরোধ করা হয়নি নিষেধ, কিন্তু প্রয়োজন সচেতনতা এবং বিকল্প বেছে নেওয়ার সাহস। কারণ, সাজ যদি ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে আনে-তবে সেই সৌন্দর্য আর কিসের?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :
  • আপডেট সময় : ০৪:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ৫৮ বার পড়া হয়েছে

লিপস্টিকে মৃত্যুঝুঁকি!

আপডেট সময় : ০৪:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

সৌন্দর্য চর্চার সংজ্ঞা বদলেছে সময়ের সঙ্গে। একসময় নারীদের সাজসজ্জা সীমাবদ্ধ ছিল স্নো, পাউডার আর একটুখানি কাজলে। কিন্তু আজকের দিনে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের কনসিলার, লিপস্টিক, লিপ গ্লস, হাইলাইটার ও ব্লাশের মতো চকচকে প্রসাধনী সামগ্রী। অথচ এই চকচকে সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক স্বাস্থ্যঝুঁকি-যা ধীরে ধীরে নারীদের ঠেলে দিচ্ছে প্রাণঘাতী রোগের দিকে।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লিপস্টিক ও লিপ গ্লোসে পাওয়া গেছে সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, অ্যালুমিনিয়ামসহ ৯টি ক্ষতিকর ধাতু, যা শুধু ত্বকে প্রতিক্রিয়া নয়, দীর্ঘমেয়াদে স্নায়বিক রোগ, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।

গবেষকরা ৩২টি সাধারণ বাজারজাত লিপস্টিক ও লিপ গ্লোস পরীক্ষা করে দেখেছেন, তার ৭৫ শতাংশে পাওয়া গেছে সীসা, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা ও স্নায়বিক রোগের কারণ হতে পারে। একইসঙ্গে ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিও বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া গেছে, যা পাকস্থলীর টিউমার, কিডনির ক্ষতি এবং হাড় দুর্বলতা ঘটাতে পারে।

সবচেয়ে বেশি মাত্রায় মিলেছে টাইটানিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম। যা শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে অ্যালার্জি বা চর্মরোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণার ভয়ংকর দিক হলো, এই পণ্যগুলো কোনো বিলাসবহুল বা সীমিত সংস্করণের নয়। বরং বাজারে সহজলভ্য, বহুল ব্যবহৃত সাধারণ প্রসাধনী, যেগুলো দেশের দোকানপাট থেকে শুরু করে অনলাইন স্টোরেও পাওয়া যায়। গবেষকরা বলছেন, ক্ষতিকর পদার্থ শুধু আছে বললেই যথেষ্ট নয়, এগুলোর মাত্রা এতটাই বিপজ্জনক যে প্রতিদিনের ব্যবহারে শরীরেই জমে উঠছে ধীরে ধীরে মৃত্যুর বিষ।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আজও প্রসাধনীতে ধাতুর উপস্থিতির ওপর কোনো কঠোর আইন নেই। ফলে একের পর এক বিপজ্জনক উপাদান মিশে যাচ্ছে রঙিন লিপস্টিক বা চকচকে গ্লসের মধ্যে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছুটা এগিয়েছে। তারা সীসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে প্রসাধনী পণ্যে।

গবেষক দলের প্রধান বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব ধাতু নিয়মিত ব্যবহারে কীভাবে মানবদেহে জমে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে, সেটা এখনো যথেষ্টভাবে মূল্যায়িত হয়নি। আমরা বড় পরিসরে গবেষণা দাবি করছি এবং একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

একদিকে সুন্দর ঠোঁটের লোভ, অন্যদিকে অজান্তেই শরীরে প্রবেশ করা বিষাক্ত ধাতু। লিপস্টিক ব্যবহারে অনুরোধ করা হয়নি নিষেধ, কিন্তু প্রয়োজন সচেতনতা এবং বিকল্প বেছে নেওয়ার সাহস। কারণ, সাজ যদি ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে আনে-তবে সেই সৌন্দর্য আর কিসের?