রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন
জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। তিন আসামির মধ্যে একমাত্র তিনিই কারাগারে আটক আছেন, বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
যেভাবে রাজসাক্ষী মামুন
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক আইজিপির রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
অপর দিকে ‘পলাতক’ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন তাদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিরোধিতা করে শুনানি করা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
তবে সাবেক আইজিপি মামুন মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনো আবেদন করেননি। তার বদলে তিনি দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।
অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় হাজির করে মামুনকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনায় ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় তার কাছে বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দায় তিনি স্বীকার করেন কি না?
জবাবে মামুন বলেন, তিনি দোষ স্বীকার করছেন। আর অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করবেন।
মামুন যেহেতু দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আলাদা রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। আদালত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন। তৃতীয় আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্য কী। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে হয়ে ছিল সেই অপরাধের সবকিছু যেহেতু তার জানবার কথা সেইহেতু সমস্ত তথ্য তিনি আদালতকে উদঘাটনের ব্যাপারে সহ্যায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন।”
তিনি সাক্ষী হেসেব গণ্য হবেন। বাংলায় এটাকে বললে রাজসাক্ষী। কিন্তু আইনে যেটাকে বলা হয়েছে–অ্যাপ্রুভার।”
রাজসাক্ষী হলে মামুনকে ক্ষমা করা হবে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তাজুল বলেন, “তার বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।”
বাজেট ২০২৫-২৬ সমগ্র বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেট খেলা বাণিজ্য হ্যালো গ্লিটজ লাইফস্টাইল টেক সব খবর
বাংলাদেশ
যেভাবে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন, তার সাক্ষ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শুনানিতে তিনি বলেছেন, অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করবেন।
যেভাবে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন, তার সাক্ষ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jul 2025, 12:21 AM
Updated : 11 Jul 2025, 03:40 AM
1.4k
Shares
facebook sharing buttontwitter sharing buttonsharethis sharing button
জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। তিন আসামির মধ্যে একমাত্র তিনিই কারাগারে আটক আছেন, বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
যেভাবে রাজসাক্ষী মামুন
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক আইজিপির রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
অপর দিকে ‘পলাতক’ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন তাদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিরোধিতা করে শুনানি করা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
তবে সাবেক আইজিপি মামুন মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনো আবেদন করেননি। তার বদলে তিনি দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।
অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় হাজির করে মামুনকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনায় ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় তার কাছে বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দায় তিনি স্বীকার করেন কি না?
জবাবে মামুন বলেন, তিনি দোষ স্বীকার করছেন। আর অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করবেন।
মামুন যেহেতু দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আলাদা রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। আদালত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন। তৃতীয় আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্য কী। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে হয়ে ছিল সেই অপরাধের সবকিছু যেহেতু তার জানবার কথা সেইহেতু সমস্ত তথ্য তিনি আদালতকে উদঘাটনের ব্যাপারে সহ্যায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন।”
তিনি সাক্ষী হেসেব গণ্য হবেন। বাংলায় এটাকে বললে রাজসাক্ষী। কিন্তু আইনে যেটাকে বলা হয়েছে–অ্যাপ্রুভার।”
রাজসাক্ষী হলে মামুনকে ক্ষমা করা হবে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তাজুল বলেন, “তার বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।”
সেই সঙ্গে প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বিবৃতির (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) ৩ অগাস্ট এবং মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৪ অগাস্ট দিন রেখেছে আদালত।
আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে তিন আসামির বিরুদ্ধে।
এর পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।
এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শুরু হল। আর তা শুরু হল সেই আদালতে, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
রাজসাক্ষী কে হতে পারেন?
একটি অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে গোপন তথ্য জানা কোনো ব্যক্তি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের পুরো ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত সকল অপরাধী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য প্রকাশ করে আদালতে যিনি সাক্ষ্য দেন তিনিই রাজসাক্ষী, এখন যাকে রাষ্ট্রের সাক্ষীও বলা হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ধারা, সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারা ও পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশ (পিআরবি) বিধি ৪৫৯, ৪৮৬ এ রাজসাক্ষী বিষয়ে বলা আছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭ ধারায় দুষ্কর্মের সহচরকে ক্ষমা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।
এ ধারাটির উপধারা (১) অনুসারে, কেবলমাত্র দায়রা আদালতে বিচার্য কোনো অপরাধ বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ বা দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ বা দণ্ডবিধির ২১৬ক, ৩৬৯, ৪০১, ৪৩৫ এবং ৪৭৭ক ধারার কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের শর্তে রাজসাক্ষী করা হয়।
কোনো মহানগর হাকিম বা কোনো প্রথম শ্রেণির হাকিম অপরাধটির তদন্ত, অনুসন্ধান বা বিচারের কোনো পর্যায়ে অপরাধটির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে গোপন তথ্যের জানেন বলে অনুমিত কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাকে এই শর্তে ক্ষমা করার প্রস্তাব দিতে পারেন। সে শর্ত হল-তার জানা মতে অপরাধ সম্পর্কিত সামগ্রিক অবস্থা এবং তা সংঘটনের ব্যাপারে মূল অপরাধী বা সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত প্রত্যেকটি লোক সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বা সত্য ঘটনা প্রকাশ করবে।
এই ধারায় অপরাধ স্বীকার করা ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিলেও সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করা কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জামিনে না থাকলে
বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হেফাজতে আটক রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৮ ধারায় ক্ষমা প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে বিচারকালে সংশ্লিষ্ট অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সেই সম্পর্কে তথ্যের অধিকারী বলে অনুমিত কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে তাকে একই শর্তে ক্ষমা করা যাবে।
সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় অপরাধীর সহযোগীর কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অপরাধে সহযোগী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের উপযুক্ত ব্যক্তি হবে এবং কোনো অপরাধে-সহযোগীর অসমর্থিত সাক্ষ্যের উপর অগ্রসর হয়ে আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হলে কেবলমাত্র সেই কারণেই ওই সাজা বেআইনি হবে না।