1. admin@kagojerbarta.com : admin :
ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলীকদমের নতুন বিস্ময় তিনাম ঝরনা

প্রতিনিধির নাম
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে, সুউচ্চ পাহাড়ের নিরালায় লুকিয়ে থাকা এই ঝরনা এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে তার অপার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে।

যারা প্রকৃতির দুর্গম পথে হাঁটতে ভালোবাসেন, ঝরনা কলতানে মনকে সিক্ত করতে চান, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বান্দরবানের আলীকদমের এক নতুন বিস্ময় তুই ইং ঝরনা বা তিনাম ঝরনা। মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে, সুউচ্চ পাহাড়ের নিরালায় লুকিয়ে থাকা এই ঝরনা এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে তার অপার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে।

তিনাম ঝরনাটি আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে অবস্থিত। এর সুনির্দিষ্ট অবস্থান মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে। আলীকদম সদর থেকে মাতামুহুরী নদীপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পোয়ামুহুরী বাজার থেকে উজানের দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঘণ্টাখানেক পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে এই ঝরনার কাছাকাছি। তবে সেখানে নেই ভ্রমণের অনুমতি। পর্যটকরা লুকিয়ে গিয়েই উপভোগ করেন তিনাম ঝরনা সৌন্দর্য। নৌকায় না গিয়ে অনেক ভ্রমণপ্রেমী ট্রেকিং বা হেঁটেও ঝরনায় যায় বলে শোনা যায়।

স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠী এই ঝরনাকে ‘তুইং ঝিরি ঝরনা’ বা ‘তুই ইং ঝরনা’ নামেও চেনে। ম্রো ভাষায় ‘তুই’ শব্দের অর্থ পানি এবং ‘ইং’ শব্দের অর্থ ‘কালো’। সম্ভবত ঝরনার গভীর অংশের পানির রং বা এর চারপাশের ঘন ছায়ার কারণে এমন নামকরণ হয়েছে।

তিনাম ঝরনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর পাশাপাশি দু’টি স্রোতধারা। অন্তত ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের খাদ বেয়ে অবিরাম ধারায় নেমে আসে এর পানি। ঝরনার পাদদেশে রয়েছে দু’টি জলাশয়। তার পাশেই দেখা যায় দু’টি সুড়ঙ্গ।

এটি আলীকদম উপজেলায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ঝরনাগুলোর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন। মূলত, আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এর রূপ হয়ে ওঠে আরো মনোমুগ্ধকর। যদিও বছরের অন্য সময়ে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসে, তবে শ্রাবণ শেষে ভাদ্রের মাঝামাঝিতেও এর যৌবনে ভাটা পড়েনি। এটি পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য যেন সবুজ পাহাড়ের নীরব অভ্যর্থনা।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার চার পর্যটক আলীকদমের রূপমুহুরী ঝরনা দেখতে যান। সেখানে স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছে তারা জানতে পারেন, পোয়ামুহুরী থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের নৌপথের দূরত্বে লুকিয়ে আছে আরেকটি ঝরনা, নাম ‘তুই ইং বা তিনাম’। আরো বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই ঝরনায় এর আগে কোনো পর্যটকের পদচিহ্ন পড়েনি! এই খবর শুনেই চার পর্যটক লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা তিনাম ঝরনা দেখতে উৎসুক হন। তাদের দলনেতা মোহসিন হোসেন এমনটাই বর্ণনা করেন।

তুই ইং বা তিনাম ঝরনা দেখতে গিয়ে পর্যটকরা একইসাথে রূপমুহুরী ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। রূপমুহুরী ঝরনার মুগ্ধতা দেখে এর আগেও শত শত পর্যটক মাতামুহুরী নদীপথে পোয়ামুহুরী গিয়েছেন। রূপমুহুরী ও তুই ইং ঝর্ণার প্রাকৃতিক রূপ ও গঠনশৈলী নিঃসন্দেহে পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো।
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :
  • আপডেট সময় : ০২:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে

আলীকদমের নতুন বিস্ময় তিনাম ঝরনা

আপডেট সময় : ০২:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে, সুউচ্চ পাহাড়ের নিরালায় লুকিয়ে থাকা এই ঝরনা এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে তার অপার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে।

যারা প্রকৃতির দুর্গম পথে হাঁটতে ভালোবাসেন, ঝরনা কলতানে মনকে সিক্ত করতে চান, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বান্দরবানের আলীকদমের এক নতুন বিস্ময় তুই ইং ঝরনা বা তিনাম ঝরনা। মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে, সুউচ্চ পাহাড়ের নিরালায় লুকিয়ে থাকা এই ঝরনা এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে তার অপার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে।

তিনাম ঝরনাটি আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে অবস্থিত। এর সুনির্দিষ্ট অবস্থান মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীরে। আলীকদম সদর থেকে মাতামুহুরী নদীপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পোয়ামুহুরী বাজার থেকে উজানের দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঘণ্টাখানেক পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে এই ঝরনার কাছাকাছি। তবে সেখানে নেই ভ্রমণের অনুমতি। পর্যটকরা লুকিয়ে গিয়েই উপভোগ করেন তিনাম ঝরনা সৌন্দর্য। নৌকায় না গিয়ে অনেক ভ্রমণপ্রেমী ট্রেকিং বা হেঁটেও ঝরনায় যায় বলে শোনা যায়।

স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠী এই ঝরনাকে ‘তুইং ঝিরি ঝরনা’ বা ‘তুই ইং ঝরনা’ নামেও চেনে। ম্রো ভাষায় ‘তুই’ শব্দের অর্থ পানি এবং ‘ইং’ শব্দের অর্থ ‘কালো’। সম্ভবত ঝরনার গভীর অংশের পানির রং বা এর চারপাশের ঘন ছায়ার কারণে এমন নামকরণ হয়েছে।

তিনাম ঝরনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর পাশাপাশি দু’টি স্রোতধারা। অন্তত ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের খাদ বেয়ে অবিরাম ধারায় নেমে আসে এর পানি। ঝরনার পাদদেশে রয়েছে দু’টি জলাশয়। তার পাশেই দেখা যায় দু’টি সুড়ঙ্গ।

এটি আলীকদম উপজেলায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ঝরনাগুলোর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন। মূলত, আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এর রূপ হয়ে ওঠে আরো মনোমুগ্ধকর। যদিও বছরের অন্য সময়ে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসে, তবে শ্রাবণ শেষে ভাদ্রের মাঝামাঝিতেও এর যৌবনে ভাটা পড়েনি। এটি পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য যেন সবুজ পাহাড়ের নীরব অভ্যর্থনা।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার চার পর্যটক আলীকদমের রূপমুহুরী ঝরনা দেখতে যান। সেখানে স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছে তারা জানতে পারেন, পোয়ামুহুরী থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের নৌপথের দূরত্বে লুকিয়ে আছে আরেকটি ঝরনা, নাম ‘তুই ইং বা তিনাম’। আরো বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই ঝরনায় এর আগে কোনো পর্যটকের পদচিহ্ন পড়েনি! এই খবর শুনেই চার পর্যটক লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা তিনাম ঝরনা দেখতে উৎসুক হন। তাদের দলনেতা মোহসিন হোসেন এমনটাই বর্ণনা করেন।

তুই ইং বা তিনাম ঝরনা দেখতে গিয়ে পর্যটকরা একইসাথে রূপমুহুরী ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। রূপমুহুরী ঝরনার মুগ্ধতা দেখে এর আগেও শত শত পর্যটক মাতামুহুরী নদীপথে পোয়ামুহুরী গিয়েছেন। রূপমুহুরী ও তুই ইং ঝর্ণার প্রাকৃতিক রূপ ও গঠনশৈলী নিঃসন্দেহে পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো।
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)